হাবিবুর রহমান: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার ১৩০ একর আয়তন বিশিষ্ট বৃহদাকৃতির নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা ঐতিহ্যবাহী রাজধলা বিল। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্যে এক আকর্ষণীয় স্থান। রাজধলা বিল শুধু নামেই একটি ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান নয় আবহমান কাল থেকে এর সাথে জড়িত রয়েছে অনেক মীথ ও মজাদার গল্প।
স্বচ্ছপানি ও মনোরম পরিবেশের কারণে প্রতিদিন এখানে ছুটে আসে ভ্রমণপিপাসু মানুষ। প্রতিদিনি অবসর সময় কাটাতে ও আনন্দ বিনোদন উপভোগ করতে স্থানীয় অধিবাসীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীদের পদ চারণায় মুখরিত হয়ে উঠে রাজধলা বিল।
লোক মুখে শোনা যায়, প্রকৃতির মনোরম পরিবেশের কারণে জমিদারদের একাংশ স্থানান্তরিত হয়ে ধলা বিলের পুর্ব ও দক্ষিণ দিকে বসতি স্থাপন করে। জমিদারদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিলের পানি প্রজা সাধারণের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল।
জানা যায়, ধলা শব্দের সঙ্গে সুসং জমিদার পরিবারের বৈবাহিক সূত্রে প্রাপ্ত রাজা উপাধিটা সংযুক্ত হয়ে বিলের নামাকরণ হয় রাজধলা।
জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে বিল রক্ষা ও উন্নয়নে কাজ হয়েছে। বিলের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য বর্ধনে ও মানুষের চলাচল উপযোগী রাস্তা, ঘাট ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। যা সৌন্দর্য পিপাসু মানুষদের কাছে আকর্ষিত হয়েছিল।
কিন্তু ঐতিহাসিক রাজধলা বিল সংস্কারের অভাবে দিন দিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। পর্যটক ও দর্শনার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে রাস্তার মাটি সরে রাস্তাগুলো ভেঙ্গে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। রাজধলা বিলের পাড় ঘেঁষে উভয় পাশে ব্লক বসিয়ে পাকা নান্দনিক সড়ক নির্মাণ করার কথা থাকলেও পুরোটা আর করা হয়নি।
প্রভাষক আবু হানিফ তালুকদার রাসেল বলেন, অবসর সময়ে এখানে প্রায়ই ঘুরতে আসি। বর্তমানে ভাঙ্গা রাস্তা ও বালুর জন্য হেঁটে চলাচল করা অসম্ভব। শিক্ষার্থী জুবায়ের সরকার বলেন, গত বর্ষাকালে সড়কে বড় বড় গর্তসহ ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়ে মাটি সরে গিয়ে অনেক অংশ পানির সাথে মিশে গেছে। ভেঙে পড়েছে ঘাটসহ বসার স্থানগুলো।
ব্যবসায়ী মো. ছাইদুল ইসলাম বলেন, একটি টয়লেট নির্মাণ করা হলেও টয়লেটটি শুরু থেকেই পরিত্যক্ত রয়েছে।
দর্শনার্থী লিজা চন্দ্র জানান, বিলের পশ্চিম পাশে সংযোগ রাস্তাটিসহ ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রচুর পরিমানে বালুর জন্য ঐ রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো যাচ্ছে না। পরিবার নিয়ে এসে খুব বিপাকে পরতে হয়েছে।
স্থানীয় মাসুদ রানা রুবেল জানান, বর্তমানে যে অবস্থা দ্রুত সংস্কার না করা হলে কোন প্রকার সামান্য একটু বৃষ্টি হলে নির্মিত স্থাপনাসহ রাস্তাটি বিলের গর্ভে মিশে যেতে পারে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এখানে রাস্তার দু’পাশে গাছের সারি, ছোট ছোট বসার স্থান এবং বিলে কয়েকটি নৌকা থাকলে এখানে অনেক ভ্রমণপিপাসু আনন্দ বিনোদনের জন্য ছুটে আসতো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে কুলসুম বলেন, বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে অবশিষ্ট রাস্তাগুলো নির্মাণ ও মেরামত করা হবে। রাজধলা বিলকে পর্যটনের আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাবিত পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply